নিজস্ব প্রতিবেদক :: করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে ঈদ পরবর্তী বরিশালসহ সারাদেশে চলছে ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ বা লকডাউন। সরকারের কঠোর বিধিনিষেধ এর ফলে বন্ধ রয়েছে যাত্রীবাহী বাস সহ অন্যান্য গণপরিবহন। তবে থেমে নেই মানুষের ঢাকায় যাত্রা।
সোমবার কঠোর লকডাউনের দিনে চতুর্থ দিনে বরিশাল থেকে অসংখ্য মানুষ ঢাকায় যাত্রা শুরু করেন। বাস-লঞ্চ বন্ধ থাকায় গন্তব্যে পৌঁছতে তারা বিকল্প যান হিসেবে বেছে নিচ্ছে থ্রি-হুইলার, মাইক্রোবাস বা প্রাইভেট কার। আবার এসব যানের কাছে পৌঁছতে উঠতে হচ্ছে ভ্যানগাড়ি বা রিকশায়। কেউ বা আবার পায়ে হেটেও গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন।
সরেজমিনে সোমবার সকালে নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডে দেখা যায়, সংখ্য মানুষ স্ত্রী এবং শিশু সন্তানদের নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন। নথুল্লাবাদ পুলিশ চেক পোস্ট পার হতে পারলেই তারা পেয়ে যাচ্ছেন কোন কোন যানবাহন।
নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনালের অদূরে কাশিপুর চৌমাথা এলাকায় দেখা গেছে, ‘গ্যাস চালিত অসংখ্য সিএনজি, অটো, মাহেন্দ্র ও মোটরসাইকেল থামিয়ে রাখা হয়েছে। তারা বরিশালের যাত্রীদের মাওয়া ঘাট পর্যন্ত পৌঁছে দিচ্ছেন। সেখান থেকে ফেরি পার হয়ে ভিন্ন ব্যবস্থায় ঢাকায় পৌঁছাচ্ছে মানুষ। এ ক্ষেত্রে কয়েকগুন ভাড়াও আদায় করে নিচ্ছেন যানবাহন চালকরা।
স্ত্রী এবং চার বছরের শিশু সন্তান নিয়ে ঢাকায় যাত্রা করা পটুয়াখালীর বাসিন্দা আলাউদ্দিন মিয়া বলেন, ‘পণ্যবাহী ট্রাকের পেছনে বসে বরিশাল পর্যন্ত এসেছি। এখান থেকে মাওয়া পর্যন্ত যেতে পারলেই ঢাকা পৌঁছানো খুব সহজ হয়ে যাবে। তাই সিএনজি যোগে মাওয়া যাচ্ছি। চালক হাজার টাকা ভাড়া দাবি করলে ৮শ টাকা দিচ্ছি জনপ্রতি।
শাকিল নামের যুবক বলেন, ‘চেয়েছিলাম মোটরসাইকেলে মাওয়া যাবো। কিন্তু মোটরসাইকেলে জনপ্রতি ৮শ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া দাবি করছে। প্রতিটি মোটরসাইকেলে তিনজন যাত্রী তোলা হচ্ছে। তাই সিএনজিতেই যাচ্ছি। তাছাড়া মোটরসাইকেলে ঝুঁকিও বেশি। বৃষ্টি নামলে ভিজে যেতে হবে।
নগরীর কাশিপুর এলাকার বাসিন্দা সিএনজি চালক শাহে আলম বলেন, ‘লকডাউনে সবগাড়ি বন্ধ। ছেলে মেয়ে নিয়ে কষ্টে আছি। পুলিশ পথে পথে গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে আবার গন্তব্যে যাত্রা করছি। তবে কোন কোন স্থানে সড়কে থাকা চেক পোস্টে কিছু খরচ দিয়ে যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব বলে জানান ওই চালক।
এদিকে, সরেজমিনে নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন পুলিশ চেক পোস্টে পুলিশ সদস্যদের দায়সারাভাবে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। মানুষ এবং যানবাহন চলাচল করলেও তা থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রবনতা তেমন লক্ষ করা যায়নি। ফলে নির্বিঘ্নেই লকডাউন ভেঙে গন্তব্যে যাত্রা করতে পারছে মানুষ।
চেক পোস্টে দায়িত্ব থাকা পুলিশ সদস্যদের এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তারা দায়সারা বক্তব্য দিয়ে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেন। তাদের দাবি মানুষ অসচেতন। তাদের আটকানো যাচ্ছে না। নানা অজুহাতে বাইরে বের হচ্ছে। তবে সিএনজি বা মোটরসাইকেলে ঢাকায় যাত্রার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে পুলিশ সদস্যরা দাবি করে বলেন কিছু মানুষ আসছে, তারা ঢাকায় নয়, পার্শ্ববর্তী উপজেলায় যাচ্ছে। তাও গোপনে শাখা পথ ব্যবহার করে।
এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. জাকির হোসেন মজুমদার বলেন, ‘নথুল্লাবাদ ছাড়াও বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের রামপট্টিতে এবং নতুন হাট এলাকায় আমাদের চেকপোস্ট রয়েছে। যারা বাইরে বের হচ্ছে তাদের আমরা বুঝিয়ে শুনিয়ে পাঠিয়ে দেই।
তাছাড়া গত চার দিনে অনেক যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা এবং জব্দ হয়েছে। আমরা সর্বোচ্চভাবে চেষ্টা করছি মানুষকে মহামারি করোনা থেকে মুক্ত রাখতে। কিন্তু সাধারণ মানুষের মাঝে এই সচেতনতার সৃষ্টি না হলে শুধু মামলা আর জরিমানা করে কতক্ষন থামিয়ে রাখা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।
উল্লেখ্য, ‘সোমবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় বরিশাল বিভাগে নতুন করে ৮৪১ জনের করোন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। একই সময় আক্রান্ত এবং উপসর্গে মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের। যার মধ্যে ৮ জন ছিলেন করোনা আক্রান্ত। এ নিয়ে বিভাগে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২৯ হাজার ৭৫২ এবং মৃত্যু হয়েছে ৪২৮ জনের।
Leave a Reply