আজ শনিবার নগরীর বিভিন্ন এলাকার স’মিলে (কাঠ চেরাই মিল) দেখা যায়, গাছের গুঁড়ি করাতে ফেলে ছোট ছোট গোল আকৃতির টুকরা তৈরি করা হচ্ছে।
এই গোল টুকরাগুলোই মাংস কাটার খাইট্টা হিসেবে ব্যবহার করা হবে। কোথাও কোথাও স’ মিল থেকে খাইট্টাগুলো অটোরিকশা বা ভ্যানে করে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। এরপর নগরীর বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী দোকান বসিয়ে সেগুলো বিক্রি করা হচ্ছে। আকার অনুযায়ী একেকটি খাইট্টা বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা করে।
ব্যবসায়ীরা জানান, খাইট্টা সব কাঠ দিয়ে তৈরি করা যায় না। এটি তৈরি করতে হয় এমন কাঠ দিয়ে, যাতে চাপাতির (মাংস কাটার যন্ত্র) কোপে কাঠের গুঁড়া না ওঠে। রাজধানীতে কোরবানির মাংস কাটার জন্য তৈরি করা এসব খাইট্টার অধিকাংশই তেঁতুল গাছের কাঠ দিয়ে তৈরি।
তেতুল গাছের কাঠ দিয়ে খাইট্টা বানানোর কারণ হিসেবে তারা জানান, তেতুল কাঠে সহজে চাপাতির কোপ বসবে না। তাই কাঠের গুঁড়াও উঠবে না। ফলে মাংস নষ্ট হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। নগরীর নাজিরা পোল সংলগ্ন রাস্তার ধারে এমনই একটি দোকান সাজিয়ে বসা সানচু বলেন, ‘এবছর আজই প্রথম এখানে বসলাম। তবে গতবারের চেয়ে এবার তেমন একটা বিক্রি হচ্ছে না। ঈদের এখনও তিন দিন বাকি আছে। আশা করি যা এনেছি সব বিক্রি হয়ে যাবে। আকার অনুযায়ী একটা খাইট্টা ২০০-৩০০ টাকায় বিক্রি করছি। তিনি বলেন, ‘বরিশালের এই নাজিরা পোলে ১০ বছরের বেশি সময় ধরে খাইট্টা বিক্রি করি।
এছাড়া আমি আটোরিকশা চালিয়ে পরিবার নিয়ে কাউনিয়া থাকি। ৪-৫ বছর ধরে আমি কোরবানির ঈদের আগে এই ব্যবসা করছি। রিকশা চালিয়ে যে আয় হয়, তার চাইতে এখান থেকে আয় বেশি হয় কোরবানি উপলক্ষে। পরিশ্রমও কম। কিন্তু সব সময় এই ব্যবসা করা যায় না। ঈদের পরের দিন থেকে আবার রিকশা চালাতে হবে।
নগরীর চাঁদমারী একটি স’ মিল থেকে ভ্যানে করে খাইট্টা কিনে নিয়ে যাওয়া হেলাল সরদার বলেন, ‘আমার বাসা বাংলা বাজার। আমি রিফোজি কলোনীতে ১৫ বছর ধরে বসবাস করি। এখান থেকে খাইট্টা কিনে নিয়ে যাচ্ছি। বাংলা বাজারের সামনে বসে বিক্রি করব। একেকটি ২৫০-৩৫০ টাকায় বিক্রি হবে বলে আশা করছি। সমিলটিতে খাইট্টা বানানোর কাজ করা নাছির বলেন, ‘মাংস কাটার খাইট্টা সব ধরনের কাঠ দিয়ে তৈরি করা যায় না। যে খাইট্টা পাওয়া যায় তার প্রায় সবই তেঁতুল কাঠ দিয়ে তৈরি। তেঁতুল কাঠ খুব শক্ত ও চিমটে। এতে সহজে কোপ বসে না। ফলে মাংস কাটতে কোনো সমস্যা হয় না।
তিনি বলেন, ‘প্রায় ৬ বছর ধরে স’মিলে কাজ করছি। সচরাচর আমরা মাংস কাটার খাইট্টা তৈরি করি না। তবে প্রতিবছর কোরবানীর ঈদ আসলেই একাজ করি। তবে এবার করোনার কারনে প্রতিবছরের চেয়ে অনেক কম বানিয়েছি। ইতোমধ্যে ১ হাজার পিসের মত বিক্রি করেছি। ঈদের আগে এখনও তিন দিন আছে। তবে এ বছর বেশি একটা বিক্রি করতে হবে না বলে জানিয়েছেন। কেন বেশি বিক্রি হবে না এবার প্রশ্ন করলে নাছির বলেন, প্রায় দুই বছর ধরে করোনা কারনে মানুষ অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হইছে। অনেকের পকেটে এবার টাকাও নেই। তাই অনেক মানুষই এবছর কোরবানী দিবে না বলে জানিয়েছেন তিনি। এরজন্যই এবার খাইট্ট বিক্রি অধেক হবে মনে করেন তিনি।
Leave a Reply