নিজস্ব প্রতিবেদক।
মা ইলিশ রক্ষায় আজ মধ্য রাত থেকে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে। এ সময়ে জেলেদের ডাঙায় ধরে রাখতে সমন্বিত প্রতিরোধ গড়ে তুলবে মৎস্য অধিদপ্তর। এবার কেবল নদীতে নয় বরং তীরেও ইলিশ নিধনকারীদের ঠেকাতে নজরদারি বাড়ছে। বিশেষ করে নদী তীরবর্তী এলাকায় ইলিশ নিধনে জড়িতদের দাঁড়াতেই দেবে না প্রশাসন। এ জন্য প্রতিদিন ৫টি টিমের পাশাপাশি পুলিশ, র্যাব ও নৌবাহিনী নামানো হচ্ছে মেঘনাসহ বড় নদীগুলোতে। ডাঙায় থাকছে ফিশ গার্ড ও ইলিশ পাহারাদার। জেলার অর্ধ লাখ জেলের খাদ্য সহায়তা নিশ্চিতের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। এদিকে, মৌসুম শেষ হলেও রুপালী ইলিশের বেচাকেনা গত বছরের থেকে ৩০ ভাগ কম বলে মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
ইলিশের ভরা মৌসুমে গত জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৩ মাসে বরিশালে নদীর মাছ মোট বেচাকেনা হয়েছে ৮ হাজার ৯৪ টন। এর মধ্যে গত জুলাই মাসে ২ হাজার ৮৬৯ টন, আগস্টে ২ হাজার ৮২১ টন ও সেপ্টেম্বরে (১৫ তারিখ পর্যন্ত) ২ হাজার ৪০৪ টন ইলিশ বেচাকেনা হয়েছে। মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত বছরের তুলনায় নদীর ইলিশ ৩০ ভাগ কম বেচাকেনা হয়েছে। ইলিশ আহরণ কমার এমন অবস্থায় মধ্য রাত থেকে শুরু হলো ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা।
জানতে চাইলে বরিশাল জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস বলেন, ‘গত ৩০ সেপ্টেম্বর টাস্কফোর্সের সভায় এবার নদীতে ও তীরে উভয়েই টহল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্য জেলা পুলিশকে নদী সংলগ্ন এলাকাগুলোতে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে সদরের সায়েস্তাবাদ, কালিজিরা, চরমোনাই, চন্দ্রমোহন ও হিজলা মেহেন্দীগঞ্জের কয়েকটি স্পটে মা ইলিশ নিধন রোধে পুলিশ সতর্ক থাকবে। তবে পুলিশ যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনায় না জড়ায় এ জন্য থানাগুলোকে সতর্ক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে নদী তীরে ‘ইলিশ পাহারাদার’ থাকবে। জনবলও বাড়ানো হচ্ছে মেঘনা ঘেরা হিজলা মেহেন্দীগঞ্জসহ আশপাশের উপজেলায়। তিনি বলেন, জেলার ৫১ হাজার ৭০০ জেলেকে নদীতে নামানো ঠেকাতে ২০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। এ সময়ের মধ্যে বরফ কল বন্ধ থাকবে।
বরিশাল জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার সুদীপ্ত সরকার বলেন,টাস্কফোর্স সভায় সদরের কয়েকটি স্পটসহ হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ, কাজিরহাট মুলাদীতে থানা-পুলিশকে সতর্ক হতে বলা হয়েছে। তাঁরা সমন্বিত হটলাইনের মাধ্যমে এসব এলাকায় মা ইলিশ রক্ষায় কাজ করবেন।’
তবে বরিশাল সদর উপজেলার সায়েস্তাবাদের জেলে আব্দুল জলিল,মোসলেম মাঝি জানান,মৌসুম শেষ হলেও তেমন ইলিশ পাননি তাঁরা। এর মধ্যে অবরোধ আসায় তাদের চিন্তা সরকারি চাল সময়মতো পাবেন কি না। একই কথা জানিয়েছেন কালাবদর নদীর ইলিশ শিকারি চন্দ্রমোহনের রহিম উদ্দিন বাবুল মৃধা।
বরিশাল সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সঞ্জিব সন্যামত বলেন,মা ইলিশ রক্ষায় শনিবার সকালেও আমি নগরীর জেলে পল্লি পলাশপুরে সচেতনতা সভা করেছি। জেলেদের আশ্বস্ত করেছি নিষেধাজ্ঞাকালীন শতভাগ খাদ্য সহায়তা দেওয়ার। এরপরও নদীতে নামলে জলে ও স্থলে কঠোর আইন প্রয়োগ করা হবে। এ জন্য বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তরের ৫টি টিম দৈনিক নদীতে নজরদারি করবে।’
এ ব্যাপারে বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপপরিচালক আনিছুর রহমান তালুকদার বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় এবার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন হবে কঠোরভাবে। এ জন্য জনবল বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া ফিশ গার্ড, ইলিশ পাহারাদারও থাকবে। পুলিশ, র্যাব, নৌবাহিনী নদীতে ও নদী তীরে মৎস্য অধিদপ্তরকে সহায়তা করতে টহল জোরদার করবে। তিনি বলেন দেশের মোট উৎপাদনের ২ ভাগ ইলিশই আসে এই অঞ্চল থেকে। তাই নদী তীরবর্তী জনপ্রতিনিধিদের কারা কারা ইলিশ নিধনে জেলেদের নদীতে নামায় তা সবার জানা। মেঘনা ঘেরা হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জের কেবল নদীতে নয় এদের ওপরেও দাঁড়াতে দেওয়া হবে না।
Leave a Reply