বেতাগী প্রতিনিধি ::
বরগুনার বেতাগীতে থেকে ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ ও ঐতিহ্যবাহী বেতশিল্প। বাঁশ ও বেতের তৈরি পণ্যের আর কদর না থাকায় ঐতিহ্য হারাতে বসেছে এই শিল্পটি। এক সময় গ্রামীণ জনপদের মানুষ গৃহস্থালি, কৃষি ও ব্যবসা ক্ষেত্রে বেত ও বাঁশের তৈরি সরঞ্জামাদি ব্যবহার করা হলেও এখন বিলুপ্তির পথে এ শিল্পটি। প্লাস্টিকের ব্যবহার বৃদ্ধি ও আধুনিক জীবনধারায় কমেছে বাঁশ শিল্পের ব্যবহার। ক্ষুদ্র বাঁশ শিল্পের সাথে জড়িত অনেকেই পূর্ব পুরুষের রেখে যাওয়া আদি পেশা বদল করে হয়েছেন ভ্যান চালক। কেউ কেউ আবার জড়িয়েছেন কৃষি কাজে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক যুগ আগেও উপজেলায় চার শতাধিক পরিবার এ পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। বাঁশ-বেত দিয়ে তারা তৈরি করতো গৃহস্থালী ও সৌখিন নানা পণ্যসামগ্রী। বাড়ির আশেপাশের ঝাড় থেকে তরতাজা বাঁশ-বেত কেটে গৃহিনীরা তৈরি করতেন হরেক রকমের পণ্য। এসব বিক্রি করেই চলতো তাদের জীবনযাপন। তবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় বর্তমানে উপজেলার মাত্র ৪০টি পরিবার এই শিল্পটি ধরে রেখেছেন।
বুধবার (১১ আগস্ট) সাপ্তাহিক হাঁটের দিন পৌরবাজারে বাঁশ-বেত তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি করতে আসা প্রদীপ চন্দ্র বলেন, বেত শিল্পের দুর্দিনে উপজেলায় হাতে গোনা কিছু সংখ্যক পরিবার বেতশিল্পকে আঁকড়ে ধরে আছেন। অনেকে এ পেশা বদলে অন্যপেশায় গেলেও পূর্বপুরুষের হাতেখড়ি পেশাকে কিছুতেই ছাড়তে পারেননি তারা। তাদের তৈরি কিছু পণ্য পৌরবাজারসহ গ্রাম-গঞ্জে নিয়ে ঘোরাফেরা করলে কিছু সৌখিন মানুষরা তাদের পণ্য কিনেন। বেলা শেষে যা বিক্রি হয় তা দিয়ে তয়-তরকারি কিনে বাড়ি ফেরেন তারা।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাসন্ডা গ্রামের বাঁশ-বেত শিল্পের কারিগর জবেদ আলী বলেন, বাঁশের তৈরি জিনিসের স্থান দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিকের তৈরি জিনিসপত্র। প্লাস্টিকের তৈরি জিনিসপত্রের দাম বেশি হলেও অধিক টেকসই। তাই গ্রামের সাধারণ মানুষ অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের জিনিসপত্র ব্যবহারে অভ্যস্ত।
দেবী রানী নামের আরেক নারী কারিগর বলেন, ঐতিহ্যবাহী এই বাঁশ শিল্প টিকিয়ে রাখতে ধার-দেনা ও বিভিন্ন সমিতি থেকে বেশি লাভ দিয়ে টাকা নিয়ে কোন রকমে টিকে আছি। আমাদের এই শিল্পটির উন্নতির জন্য সরকারীভাবে অল্প লাভে ঋণ দেয়া হয় তাহলে এই শিল্পটি টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।
উপজেলার হোসনাবাদ এলাকার তপন হাওলাদার কয়েক বছর হলো পৈত্রিক পেশা ছেড়ে দিয়ে এখন দিন মজুরি করছেন। তিনি বলেন, বাঁশ-বেত শিল্পে টাকা বিনিয়োগ করে খুব একটা লাভ হতো না। এখন গতর খেটে কাজ করি, দিন বাদে ৩/৪শ’ টাকা রোজগার হয়। পরিবার নিয়ে খেয়ে পড়ে চলছি। তবে যেদিন কাজ না থাকে সেদিন অনেক কষ্ট হয়। তবে আগের চেয়ে অনেক ভালো আছি।
বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সুহৃদ সালেহীন বলেন, ক্ষুদ্র শিল্প ও কুটির শিল্পের সাথে জড়িত ব্যক্তিবর্গরা আছেন তাদের যদি ঋণ এর প্রয়োজন হয় সহজ শর্তে তাদের জন্য ব্যাংক ঋণ এর ব্যবস্থা করা হবে, যাতে তাদের আত্মসামাজিক উন্নয়ন ঘটে।
Leave a Reply